প্রকাশিত: Tue, May 14, 2024 3:24 PM
আপডেট: Sun, Jun 22, 2025 8:16 AM

ঢাবিতে মাস্টার্সে ভর্তি হতে পরীক্ষার চিন্তা, যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত হবে

ড. কামরুল হাসান মামুন

মাস্টার্সেও পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তির কথা ভাবা হচ্ছে : ঢাবি উপাচার্য। এটি একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত হবে। গত চার/পাঁচ দিন মাস্টার্সের কোর্স ভাইভা পরীক্ষা নিলাম। আমাদের বিভাগে প্রতিটি বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার পর এই কোর্স ভাইভা নেওয়ার বিধান আছে। আমাদের মাস্টার্স থিসিস এবং নন-থিসিস এই দুটি ভাগে বিভক্ত। এই ভাইভা নিতে গিয়ে বুঝলাম আমাদের ছাত্রদের একটি বড় অংশ আসলে কিছুই শিখে না। অনার্সে ভালো রেজাল্ট করেও মাস্টার্সের ভাইভাতে কিছুই পারেনি এমন ছাত্রকেও দেখেছি। পরে জেনেছি এরা আসলে মাস্টার্স করেছে ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য, হলে থাকতে পারার জন্য। মূলত এরা বিসিএস পরীক্ষার জন্য লেখাপড়া করেছে। আরেকটি শ্রেণী আছে যারা চাকুরী করেছে আর ভেবেছে পরীক্ষার আগে এক থেকে দুই মাস মোটামোটি পড়ে ডিগ্রীটা হয়ে যাবে। ভাইভাতে কিচ্ছু না পারলেও পাশ নম্বর দিয়ে দেওয়া তাদের ইচ্ছের ঘুড়িতে বাতাস দিয়েছে। এই বয়সের এত এত ছেলেমেয়েদের সময়ের এই অপচয় আমরা কিভাবে এলাউ করি। এই ছাত্রদের একটি বড় অংশেরই আসলে মাস্টার্স পড়ার কোন ড্রাইভ নাই। 

ক্লাসে পড়াতে গেলেও টের পাই। কি দারুন দারুন সাবজেক্ট পড়েছে যেমন অ্যাডভান্সড লেজার ফিজিক্স, জেনারেল রিলেটিভিটি কসমোলজি,কনডেন্সড ম্যাটার ফিজিক্স,নন-ইকুইলিব্রিয়াম স্টাটিস্টিক্যাল মেকানিক্স,রিয়েক্টর ফিজিক্স,হেলথ রেডিয়েশন ফিজিক্স। এই বিষয়গুলোর খুবই সহজ সহজ প্রশ্ন করলেও কিচ্ছু বলতে পারে না। অন্যায়টা আমরা বা আমাদের সিস্টেমই করেছে। আন্ডারগ্রাজুয়েটে যেমন ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি করা হয়ে থাকে শুধুমাত্র আন্ডার গ্রাজুয়েট পড়ার জন্য মাস্টার্সের জন্য নয়। আজকে যদি মাস্টার্সেও ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি করা হতো তাহলে ছাত্রছাত্রীরা আন্ডার গ্রাজুয়েটেও ভালো লেখাপড়া করার জন্য সিরিয়াস থাকতো যেন মাস্টার্সে ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করতে পারে। এই চাপটা আমরা শূন্য করে দিয়ে তাদের ক্ষতি করেছি। তাদের ক্ষতি মানে দেশের ক্ষতি। মাস্টার্স সবার জন্য না। 

সবাইকে মাস্টার্সের পেছনে ছুটানো একটা বিশাল অপচয়। ইংল্যান্ডে অনার্স ৩ বছরের এবং তিন বছরের অনার্স শেষে সরাসরি পিএইচডি করতে পারে। তাহলে শুধু মাস্টার্স না অনার্স থেকেও এরা ১বছর বাঁচিয়ে ১ বছর আগেই কর্মক্ষেত্রে ঢুকে যায়। আমাদের সময়ে আমাদেরও ৩ বছরের অনার্স ছিল। তখন এক বছরের মাস্টার্স হলে ঠিক আছে। এখন ৪ বছরের অনার্সের পর সবার মাস্টার্স করা একটা বিশাল অপচয়। তাই মাস্টার্স হতে হবে খুবই সিলেক্টিভ এবং তার জন্য অবশ্যই ভর্তি পরীক্ষা জরুরি। শুধু মাত্র যারা একাডেমিয়ায় যাবে তাদের জন্যই মাস্টার্স জরুরি। বাকিদের মাস্টার্সের কোন দরকার নাই। তাই বর্তমান প্রশাসনকে এমন একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরিকল্পনা করার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং কাল বিলম্ব না করে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের যা করণীয় অতি দ্রুত করার জন্য। একই সাথে লাইব্রেরি ব্যবহারের কথাও বলতে চাই। লাইব্রেরিতে বিসিএস পড়া বন্ধের একটা উদ্যোগের কথা শুনছি। এইটা আসলে আইন করে বন্ধের বিষয় না। কেন পড়ে সেই কারণ নির্ধারণ করে সেখানে রিপেয়ার করতে হবে। ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস, পরীক্ষা, ল্যাব, এসাইনমেন্ট ইত্যাদি কাজে ব্যস্ত রাখতে হবে। তাহলে এমনি এমনি লাইব্রেরীতে বিসিএস পড়া কমে যাবে। 

লেখক: অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়